ঠাট্টা, আমি এবং মায়া…

ঠাট্টা করছেন? তা করুন। ঠাট্টা করার মতই কাজ বটে এটা। সত্যি কিনা! কি লজ্জার বিষয়! কি মিথ্যাই না এই ঘটনা! আরে আরে চটছেন কেন? আহা কেন বলবো না, কি হয়েছে? বলবো, বলবো। আপনার ভাঁড়ের চা জুড়িয়ে এলো যে! নিন চুমুক দিন। বলছি, আদতে কি হয়েছে।

ছেলেবেলায় কোথায় যেন পড়েছিলাম বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এ পৃথিবীটা আসলে জীবের সরাইখানা। এক অনন্ত পথ হেঁটে এসে তারা বিশ্রাম নেয় এ শান্ত ছায়াময় সরাইখানাতে। সরাইখানার নাম দিতে হয়, তাই এই স্থান ‘পৃথিবী’। একদিন বিশ্রাম শেষে আবার রওনা হতে হবে সেই নির্দিষ্ট লক্ষের দিকে।

নানান প্রশ্ন আসে মনে। সেই প্রশ্ন করেছি আর কি! এ হেন অন্যায়! তাই সবাই ঠাট্টা করলে। চা খাইয়ে, চা খেতে বলে, একবার চা খাওয়াবে বলে ঠাট্টা জুড়ে দিলো। আচ্ছা আপনিই বলুন তো কি অন্যায় বলেছি? সরাই খানাই যদি হবে তাহলে এতো ‘পিরিত’ কিসের? এই গাছ লাগাও, বাড়ির পলেস্তারা খসে গেলো, রাস্তা সাড়াও, খানা-খন্দ ভরাও। আমি তো বাপু কখনও কোনও হোটেলে গিয়ে দেখি না ফুল গাছগুলো মরল কিনা, মেঝের টাইলস ফাটা কিনা, আরে দেখতে যাবো কেন? আমি কি শালা সারা জীবন থাকবো এখানে? তাহলে? এই ধরুন না, আমাদের পাড়ার গবাদা আর বাচ্চুদার মধ্যে খুব ঝগড়া। দুজনেরই অভিযোগ দুজনেই ওজনে মারে। ঝগড়া চলে। আমরা মেনে নিই, ব্যবসায় এসব হয়। কিন্তু তারাও তো পথিক। তবে? ঝগড়া কেন?

কি বললেন? হ্যাঁ, তা ঠিক। সত্যি তো এমনটা ভেবে দেখিনি। নানান শহর বেড়িয়ে এসে আমারও তো চাই আমার শহরের এই জিনিষটা ওই শহরের মত হোক। পাহাড় বেড়িয়ে এসেই একখানা বড় পাহাড়ি ছবি টাঙিয়ে রাখি শোওয়ার ঘরের ঠিক মুখ বরাবর। আসলে আমরা সেই স্থানের মায়াটা বহন করে আনি। আর রেষারেষি লাগে তখনই যখন সেই শ্রেষ্ঠ মায়াকে অধিকার করতে হয়। তাই দলে দলে ঝগড়া লাগে। হিংসে করি। যাইহোক আসল কথাটা তাহলে হলো যে জন্য বৌদ্ধরা এই গপ্প ফেঁদে ছিলো তা তো আসলে মায়ার ফাঁদে না পড়ার জন্য, তবুও এই গল্প গলে আমরা ফাঁদে পরেই যাই।

আচ্ছা এই মায়া, এই দৃশ্য, এই শব্দ তাকি কেবলই ‘আমার’? এর জন্মদাতাও কি আমি? যে দৃশ্য আমি দেখি বা শিল্পী ক্যানভাসে নামিয়ে আনে সেই দৃশ্যও কি ‘আমার’ আবিষ্কার করা? যে আবেগ, যে অনুভূতি নিয়ে আমরা মুগ্ধ হই, সাহিত্যের পাতা ভরে ওঠে তাও কি কেবলই ‘আমার’? কেউ আর কখনও দেখেনি এই দৃশ্য, কখনও মুগ্ধ হয়নি সেই আবেগে, অনুভূতিতে! কেন জানি না আমার বিশ্বাস আমি কেবল, অনন্তকালের এই দৃশ্য, এই মুগ্ধতা কে বড় সৌভাগ্যক্রমে অনুভব করতে পারি। আর মায়া সেও আমার পরম সৌভাগ্য, যে তা আমাকে ধরা দেয়। থাকুক, সেই মায়া থাকুক। আপনারা ঠাট্টা করলেও সেই মায়ায় থাকি, অনন্তকালের সাথে মিলতে আর লজ্জা কি! আর আপনারা না হয় নিজেরাই এক ‘কাল’ রচনা করুন।

abstract-art-joy-of-life-lotus-flower

Tags: No tags

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *