সব পেয়েছি দেশের সব্বনাশ!

রাস্তা দখল করে ‘সব পেয়েছি দেশে’র মানুষেরা!

এ এক সব পেয়েছির দেশ ছিল কিছুকাল আগে পর্যন্ত! প্রচুর চাকরি হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে, চুপিচুপি শিল্প হয়েছে, গরীবের বাড়ি হয়েছে। অথচ হঠাৎ পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে ‘দিদির দূত’ হাজির। সমস্যা নেই কিছুই, তবু তারা সমস্যা শুনতে চান। দু-একজন ভুল করে মুখ খুললে, মুখপত্র বসু মহাশয় রেগে সাংবাদিক বৈঠক করেন, ‘চক্রান্ত’। অধ্যাপক রায় বলেন, বেশ তো, মানুষের কথা বলবার অধিকার আছে! দিদি প্রশাসনিক বৈঠকে ধমকে বলেন, আর কী চাই? সব দিয়েছি। চুপ করে বসো। তবু ‘দিদির দূত’… এরা নাছোড়। সমস্যা শুনেই ছাড়বেন! কোনো এক জনসভায় দিদি বলেছেন, রাজ্য ছাড়বেন না। প্রচুর কাজ আছে। মিথ্যে নয়, কাজ আছে। আপনি পার্টি অফিসে মাস তিনেক হত্যে দিলে রাস্তায় দৈনিক আয়োজনে সিভিক পুলিশ হতে পারেন। লোন নিয়ে টোটো চালাতে পারেন। পুজোয় ঠাকুর দেখতে গিয়ে বগলে একটা কন্টেনার বেঁধে একটু মুড়ি, চানাচুর, লঙ্কা, তেল দিয়ে ঘেঁটে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারেন আর, ঘুষ দিলে সরকারি চাকরি বাঁধা। গ্যারান্টি। তবু কিছু লোকের অভিযোগের শেষ নেই। আমি দাবি করে বলছি, এসবই সত্যি। কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় সিভিক পুলিশ আসায় পার্মানেন্ট ট্রাফিক পুলিশদের প্রচুর সুবিধে হয়েছে, এতে কেউ তর্ক করবেন না। তাদের আজকাল আর বেশি কষ্ট করে লড়ি, ছোটা হাতির জানলায় গিয়ে হাত পাততে হয় না। সেই সব দৈনিক মজুরির সিভিক পুলিশেরাই কেটে যাওয়ার ভয়ে ওই কাজ করে দেয়। ভাগ পায় কিনা সন্দেহ, তবে মাঝেমাঝে ফিস্ট হয় থানায়। এই পশ্চিমবঙ্গে আপনি স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে গেলে একদল সমাজসেবীদের মোটা অংকের টাকা যে দিতে হয়, সে বাড়ির বারান্দা থেকে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেও জানতে পারবেন। আসলে বঙ্গ লক্ষ্মীদেবীর দেশ। বাড়ি থেকে গাড়ি, চা-দোকান থেকে মল যাই করবেন লক্ষ্মীকে প্রসাদ না চড়ালে কিছুই চলবে না। সরকার রাস্তা বানান আম-জনতার ট্যাক্স নামক ফান্ড থেকে, শেষে ব্যনার পড়ে অমুক পৌরপিতা, তমুক পৌরমাতাকে ধন্যবাদ এই রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার জন্য… ইতি, ওয়ার্ডের অধিবাসীবৃন্দ। অধিবাসীরা তো অবাক। কবে ধন্যবাদ জানালাম? আমরা কেন ধন্যবাদ জানাব? এ তো মানুষের টাকায় মানুষের কাজ, এই কাজ করবার জন্যই তো এত মারপিট করে নির্বাচন হল, তাহলে ধন্যবাদ সেইসব পৌর পিতা-মাতাদের কেন? আবার যারা রাস্তা বানালেন, দেখা যায় অনেকেই আসল কনট্রাক্টর নন, যারা দাঁড়িয়ে করাচ্ছেন কাজ, তারা তৃতীয় বা চতুর্থ দালাল। তারপর ওই ব্যানার পড়বে, ব্যনার ছিঁড়ে যাওয়ার আগেই, রাস্তার আস্তরণ আদিম হয়ে যায়। ফান্ড ভাগ হতে হতে রাস্তার কপালে কেবল কলা। এগুলোকে অভিযোগ ভেবে দোষ নেবেন না প্রশাসন। একে আপনাদের ভাষায় যে সিস্টেম বলে তা আমরা জেনে ফেলেছি। ফলে সিস্টেম সঠিক পথেই চলছে। তাহলে আবার ‘দূত’ কেন? যুদ্ধ-টুদ্ধ হলে দূত আসেন শান্তি নিয়ে। এখানে তো সেসব কিছুই নেই। সিস্টেম অনুযায়ী একদল খাবে, অন্যদল খাবারের জন্য চিৎকার করবে, বেশ সিস্টেম সচল! না, এবার অন্যদিকে চোখ পড়ল। এক গ্রামে বাইকে বোমা নিয়ে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনা। শাসকদলের সম্পাদকের ভাই মৃত। সবে সবে বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হয়েছে। মাথায় কেবলই টিম প্ল্যান ঘোরে। কোচের দৃষ্টিতে ভাবলাম, তাহলে দূতেরা দূত নয় পর্যবেক্ষক? যারা এলাকা ঘুরে বেশির প্রশ্নের পঞ্চায়েত মার্কিং করছে? হিসেব করছে, কোন পঞ্চায়েত দখল করতে কত কত বন্দুক, বোমা, গুণ্ডা মজুত করতে হবে গোডাউনে? খেলা শুরু হবে যে কোনদিন। পঞ্চায়েত ভোটের শুরুর দিন থেকেই আমার এই টিম প্ল্যান মিলল কিনা মিলিয়ে দেখে নেওয়া যাবে।

দিদির দূত নাকি সমীক্ষাকারী!

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *