বিতান যখন লেখেন তাঁর ছোটো গদ্যের বই—পাঁচটি মাত্র স্মিত রচনার এক নম্র সংকলন—অভিনেতার জার্নাল তখন কি কেবল তাঁর অভিনয়-জীবনেরই টুকরো মুহূর্তগুলি গেঁথে তুলতে চান তিনি? কেবল কি কখন কখন তাঁর কী কী মনে এসেছিল, তারই এক খতিয়ান মলাটবন্দি করেন বিতান? না, তা নয়। বিতান বরং ধীরে ধীরে এক গাঢ় ও বেদনাশ্রয়ী জীবনের আদল ফুটিয়ে তোলেন—পৃথিবীর অন্য অনেক বড়ো লেখকের মতো হয়তো খানিক অগোচরেই থাকে তাঁর এই প্রক্রিয়া। একটি সংঘবদ্ধ নাট্যগোষ্ঠীর নিয়মিত অভিনেতা হিসেবে টুকরো কয়েকদিনের কথা, সেই দিনগুলিকে স্পর্শ করে, ছুঁয়ে বসে থাকা, নাট্যাভিনয়ের দু-চারটে মৌলিক সমস্যাকে সামনে রেখে বিতান অনায়াসে চলে যান বৃহৎ গহনজীবনের নানা পরিপ্রশ্নে। এবং সেসব তখন আর নাট্যাচিন্তাতুর কোনো অভিনেতার চটজলদি জবাবপ্রত্যাশী প্রশ্নমালা থাকে না, সেসব জিজ্ঞাসা তখন হয়ে উঠতে থাকে ক্রমশ দীর্ঘ, প্রলম্বিত ছায়াময়, প্রায়শই যারা উত্তরের চাইতে অনেক বড়ো কোনো পরিসর দাবি করে বসে। সেসব সংকট তখন কোনো এক মফস্সলি যুবকের তাৎক্ষণিকতাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় বহুদূর, কখনো রবীন্দ্রনাথে, কখনো শম্ভু মিত্র বা উৎপল দত্তে, কখনো আবার কোনো ব্যক্তিকে নয়, সার্বিক দার্শনিক সমস্যার প্রান্তদেশ ছুঁয়ে ফেলে তারা।
— আব্দুল কাফি (বাংলা বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
Buy
Add a Comment