‘জ্বলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ দিয়ে’ বাঁচল বাংলাদেশের জনগন। নদীতে পড়লো, না জমিতে, সে খানিক পরে ভাবা যাবে। এই যে জনগন জাগলো, এর কৃতিত্ব ছাত্রদেরই প্রাপ্য। তাদের লাল সেলাম। এবার তর্ক চলবে এই আন্দোলন তো জামাতের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। মুজিবরের মূর্তি ভাঙা তারই প্রমাণ বহন করে। হ্যাঁ, এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, এখন আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত ঘুরছে। তা বলে যারা সাম্যের জন্য লড়লেন, শহীদ হলেন, তাদের অভিবাদন জানাবো না? যখন বাংলায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন হয়েছে, যা গড়ে তুলেছিলেন সাধারণ মানুষ, ছোটো ছোটো রাজনৈতিক দলের মদতে, সে আন্দোলনের ক্ষীর কিন্তু খেয়ে গেছেন অন্য কেউ। ফলে সেকালের শাসক আজ প্রমাণ করতে ব্যস্ত ওই আন্দোলন ছিলো মস্ত বাতেলা আর এ কালের শাসক কিছু না বলে তাতেই মদত দিয়েছেন। এটা করা গেছেন কারণ তারা কোনোদিনই মানুষের আন্দোলনের পাশে দাঁড়াননি। তারা কেবলই সেই আন্দোলনের দই মেরে দিয়ে চলে গেছেন। বাংলাদেশের এই আন্দোলনও বেহাত হবে এতে অবাক হওয়ার কোনো অবকাশই ছিলো না। শহীদের আত্মীয়-বন্ধুরা ভবিষ্যতে কপাল চাপড়ে বলবেন এই বাংলাদেশের জন্য আমার বন্ধুরা, ভাইয়েরা, ছেলেরা মেয়েরা তাঁদের প্রাণ দিতেও কার্পণ্য করেনি! কারণ জনগনের আন্দোলনকে বিপ্লবে নিয়ে যেতে হলে সাম্যবাদী দলের যে বুনিয়াদ প্রয়োজন হয়, তা না আছে বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনৈতিক দলগুলোর, না আছে ভারতের। ঠিক এই কারণেই পাঞ্জাবের কৃষক আন্দোলন, মহারাষ্ট্রের কৃষক আন্দোলন সারা দেশের বুকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। আমরা কেবল ছাতি ‘খানিক কমেছে’, এই আনন্দেই মাতোয়ারা হয়েছি। বিকল্প নেই অজুহাতে ‘জ্বলন্ত বাসে’ই বসে থেকেছি। তবু কুর্নিশ বাংলাদেশের ছাত্রদের, রাষ্ট্রের বুকে তোমরা কাঁপন ধরিয়েছো। তা না হলে এপারের ভক্তরা হঠাৎ হাসিনা-ভক্ত হয়ে উঠতে পারে?